প্রশাসনের দরজায় কড়া নারছেন অন্ধ ইউসুফ ‘সবল প্রতিবেশির দখলে দুর্বলের ভিটা’
Published : Saturday, 30 October, 2021 at 12:00 AM
মো. হাবিবুর রহমান, মুরাদনগর ||
আমি অন্ধ। আমার দুই সন্তান প্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা ও মানুষের সহযোগিতায় জোড়াতালি দিয়ে চলে আমার সংসার। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ৪ শতক ভিটা আমার পরিবারের বুকের ধন। কিন্তু দুখের বিষয় হলো আমার শেষ সম্ভল মাথা গোঁজার ঠাঁই প্রভাবশালী প্রতিবেশী তার দখলে নিয়ে গেছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন করেও কোন সুফল পাচ্ছি না। কখনো থানায়, কখনো ভূমি অফিস, আবার চেয়ারম্যান মেম্বারদের দুয়ারে-দুয়ারে ঘুরে আমি এখন ক্লান্ত। অথচ আমার কাছে জায়গার সি-এস, আর-এস, বি-এস, দলিল, নামজারি ও খাজনা রশিদ আছে। প্রতিবেশী আবু সাইদ ও তার ছোট ভাই আবুল খায়ের জায়গা দখল করে নেয়ার কারণে ঘর উঠাতে পারছি না। অন্যের বাড়িতে প্রতিবন্ধি সন্তানদের নিয়ে থাকতে হচ্ছে। মরার আগে আমার সন্তানদের আমার ভিটায় রেখে যেতে চাই। গতকাল শুক্রবার দুপুরে কুমিল্লার মুরাদনগর প্রেসক্লাবে এসে ভেজা চোখে এই প্রতিবেদকের কাছে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মোহাম্মদ ইউসুফ (৫৬) এসব কথা গুলো বলেন। তিনি উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানাধীন আকুবপুর ইউনিয়নের রাজাবাড়ি গ্রামের মৃত আব্দুল আলীমের ছেলে।
অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অন্ধ ইউসুফ পৈত্রিক সূত্রে ৪ শতক জমির মালিক। এর একাংশে ছোট্ট একটি দোকান তুলে ভাড়া দিয়েছেন তারই প্রতিবেশি চাচাতো ভাই আবু সাইদের কাছে। আবু সাইদ বছরে ৩ হাজার টাকা দেওয়ার চুক্তিতে দোকান ঘরটি ভাড়া নেয় ২০১১ সালে। সেই থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ভাড়া নিয়মিত পরিশোধ করেছেন। কিন্তু গত ৭ বছর যাবত আবু সাইদ মোহাম্মদ ইউসুফকে ভাড়া দিচ্ছেন না। তার বক্তব্য হচ্ছে এ জায়গার মালিক সে। এতে ইউসুফ ও সাইদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। এ ঘটনা মিমাংসার লক্ষে ২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বর স্থানীয় ভাবে সালিশ বসে। সালিসে স্থানীয় মাতাব্বররা কাগজপত্র ঘেটে দেখেন যে, জায়গাটির প্রকৃত মালিক অন্ধ ইউসুফ। আবু সাইদ বৈঠকে মিমাংসা মানলেও পরে আর সেই মোতাবেক কাজ করেনি। বরং পরবর্তিতে প্রতিবন্ধীর জায়গার দু’টি মেহগনি গাছ কেটে ফেলেন সে। নিরুপায় হয়ে ইউসুফ ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিলে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে। পুলিশ উভয়কে ডেকেই বিষয়টি নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার কথা বলেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চলে যাওয়ার পরই প্রতিবন্ধী পরিবারটিকে শারীরিক ভাবে নির্যাতন করে আবু সাইদ। সাইদ প্রভাবশালী হওয়ায় প্রতিবন্ধী পরিবারটির পাশে দাড়িয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করার সাহস পাচ্ছে না কেউ।
ভুক্তভোগি প্রতিবন্ধী মোহাম্মদ ইউসুফের স্ত্রী জানু বেগম বলেন, আমার স্বামী অন্ধ। আমার দুই সন্তানও প্রতিবন্ধী। আমার একটি ঘর নেই। আমি অন্যের ঘরে থাকি। শ্বশুরের দেয়া ৪ শতক জায়গা থাকা সত্বেও মাথা গোজাঁর জন্য ঘর তৈরি করতে পারছি না। সামান্য দোকান ঘরের ভাড়া দিয়ে ওষুধের খরচ চলতো, এখন তাও জোটে না। স্থানীয় মিমাংসা না মেনে আমার জায়গা ও দোকানঘর এমনকি ২টি মেহগনি গাছ নিয়ে গেছে আবু সাইদ ও তার ছোট ভাই আবুল খায়ের। শুধু তাই নয়, সে ভুয়া দলিল সৃজন করে খারিজ করতে গেলে, সঠিক কাগজ পত্র উপস্থাপন করতে না পারায় ভূমি অফিস তার খারিজ আবেদন বাতিল করে দেন। নিরূপায় হয়ে ডিসির কাছে অভিযোগ দিলেও কোন সূরাহা হচ্ছে না।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আবু সাইদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উক্ত জায়গাটি আমরা ক্রয় সূত্রে মালিক। প্রতিবন্ধী ইউসুফের বাধাঁর কারণে জয়গার খারিজ করতে পারছি না। তবে জায়গাটি আমাদের দখলে আছে।
বিষয়টির ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন করলে গত ২৯ আগষ্ট কার্যালয়ের আরডিসি উম্মে হাবীবা মীরা এ বিষয়ে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) নির্দেশ দেয়। এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুলতানা মুমিন বলেন, বিষয়টি খোঁজ-খবর নিতে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি।
আকুবপুর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক সোহাগ বলেন, জায়গাটি অন্ধ ইউসুফের ব্যক্তি মালিকানাধীন। তার নামে নামজারি রয়েছে। সহসাই বিষয়টি নোট আকারে এসিল্যান্ড স্যারের নিকট উপস্থাপন করবো।
আকুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান বাবুল আহম্মেদ মোল্লা দৈনিক কুমিল্লার কাগজকে বলেন, অন্ধ ইউসুফ তার জমি দখল করেছেন মর্মে একটি অভিযোগ ইউএনও মহোদয় আমার কাছে দিয়েছেন। স্যার বিষয়টি আমাকে দেখার দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি উভয় পক্ষকে নিয়ে মিমাংসার চেষ্টা করবো।