করোনা সংক্রমণ ফের বিপজ্জনক মোড় নিচ্ছে। শত দিবস পর ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। গত বুধবার সকাল আটটা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল আটটা পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছেন ১ হাজার ১৪০ জন। নমুনা পরীক্ষার তুলনায় এ হার প্রায় ৫ শতাংশ। এ প্রেক্ষাপটে করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারের পক্ষ থেকে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা কতটা কার্যকর হবে, কী ফল পাওয়া যাবে, সেসব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
প্রথমেই অনুসন্ধান করা প্রয়োজন করোনার সংক্রমণ বাড়ার কারণ কী? নতুন ধরন অমিক্রনের প্রাদুর্ভাবের কারণে এটি হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। কিন্তু জিন বিশ্লেষণ না করে বলা কঠিন কার শরীরে কোন ধরনের করোনা সংক্রমণ ঘটেছে। সংক্রমণ রোধে সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্তের মধ্যে আছে রেস্তোরাঁ, শপিং মল, বিমান ও ট্রেনে যাঁরা যাবেন, তাঁদের করোনার দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেওয়া এবং মাস্ক ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়া, সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমাগম সীমিত রাখা। এ ছাড়া ১২ বছরের ঊর্ধ্বে সব শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ে যেতে হলে অন্তত এক ডোজ টিকা দিতে হবে বলে জানানো হয়েছে। একই বিদ্যালয়ে ১২ বছরের বেশি বয়সের ও কম বয়সের শিক্ষার্থী আছে, তাদের ক্ষেত্রে এ খণ্ডিত পদক্ষেপ কোনো কাজে লাগবে কি? এ ছাড়া এখনো দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থী টিকা পায়নি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থী আছে ১ কোটি ২০ লাখ। এর মধ্যে এক ডোজ টিকা নিয়েছে ৪৫ লাখ। সে ক্ষেত্রে এ কর্মসূচি সফল না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
কীভাবে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হবে, কে করবেন, তা এখনো পরিষ্কার নয়। বিমান ও ট্রেনের টিকিট কাটার ক্ষেত্রে দুই ডোজ টিকার বাধ্যবাধকতা কার্যকর অসম্ভব নয়। রেস্তোরাঁ ও শপিং মলের ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন কঠিন হবে। শপিং মলের বাইরে মার্কেট ও কাঁচাবাজারের ক্ষেত্রে কী করণীয়, সে নির্দেশনা নেই। বাজার ও মহাসড়কের পাশে যেসব রেস্তোরাঁয় শ্রমজীবী মানুষই বেশি যান, তাঁদের অনেকে এখনো টিকার বাইরে আছেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেছেন, রেস্তোরাঁ ও শপিং মলে নজরদারি করতে প্রতিটি শহরে তদারকি দল থাকবে। বাংলাদেশে যত শপিং মল-রেস্তোরাঁ আছে, তার তদারকিতে বিপুলসংখ্যক লোকবল প্রয়োজন। কারা কীভাবে তার জোগান দেবেন? আবার তিনি এ তদারকির জন্য সময় দেওয়ার কথাও বলেছেন। এর অর্থ এখনই কার্যকর হচ্ছে না। সীমান্ত তথা স্থল, বিমান ও নৌবন্দর সম্পর্কেও কিছু বলা হয়নি। পশ্চিমবঙ্গে ইতিমধ্যে অমিক্রন থাবা বিস্তার করেছে। গত বছর ডেলটার প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল মূলত স্থলসীমান্ত দিয়েই। এ বিষয়ে সরকারের নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।
অতএব সরকারকে বিচ্ছিন্নভাবে সিদ্ধান্ত নিলে হবে না। জাতীয় কারিগরি কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে এক মন্ত্রণালয় অন্য মন্ত্রণালয়ের ওপর, এক বিভাগ অন্য বিভাগের ওপর ব্যর্থতার দায় চাপাতে না পারে। সর্বোপরি যেকোনো কর্মসূচির সর্বোচ্চ ফল পেতে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। জনগণ মানে সরকারি বা সরকারদলীয় লোক নয়; দলমত-নির্বিশেষে সব শ্রেণি ও পেশার মানুষ।