ঈর্ষণীয়
অগ্রগতির কারণে সারা দুনিয়া আজ বাংলাদেশের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বাংলাদেশকে
বলা হচ্ছে উন্নয়নের রোল মডেল। বৈশ্বিক বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ ক্রমাগতভাবে
এগিয়ে চলেছে। কিছু কিছু সূচকে ভারত-পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে দণি এশিয়ায়
শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে। কভিড-১৯ মহামারির কারণে গত বছর প্রায় সব দেশের
প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হলেও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫.২৪ শতাংশ। সর্বশেষ
সুসংবাদটি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সিইওওয়ার্ল্ড ম্যাগাজিন। ২০২১ সালে
বিশ্বের সবচেয়ে মতাধর ১০০ দেশের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ। গত
শনিবার ১৯০টি দেশের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তাতে বাংলাদেশের অবস্থান
৮১তম। আর এ সবই সম্ভব হয়েছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল
নেতৃত্বের কারণে।
স্বাধীনতার আগে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বিশ্বে তো
বটেই, পাকিস্তানের মধ্যেও ছিল দরিদ্রতম একটি অঞ্চল। স্বাধীনতার পর
কেন্দ্রীয় সম্পদের প্রায় কিছুই পায়নি বাংলাদেশ। পরাজয় নিশ্চিত জেনে
বাংলাদেশকে একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে গিয়েছিল পাকিস্তানি সেনারা।
সদ্যঃস্বাধীন বাংলাদেশের সেই দুরবস্থা নিয়ে পরিহাস করে তৎকালীন মার্কিন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বলেছিলেন, বাংলাদেশ হলো একটি ‘তলাবিহীন
ঝুড়ি’। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সেই বাংলাদেশ
যখন এগোতে শুরু করে, তখনই স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে
হত্যা করে। রুদ্ধ হয় উন্নয়নের গতি। জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার
নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ আবার মতায় আসে। মুক্তিযুুদ্ধের চেতনায় দেশকে
এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়। কিন্তু ২০০১ সালে ষড়যন্ত্রমূলক নির্বাচনের
মাধ্যমে তাঁকে মতাচ্যুত করা হয়। আবার মতায় আসেন ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরে
অনুষ্ঠিত নির্বাচনে। শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার
সংগ্রাম। ২০০৯ সালে বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় ছিল ৭০৯ মার্কিন ডলার, তা এখন এক
হাজার ৯০০ মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। ২০০৯ সালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল
১০ বিলিয়ন ডলার, এখন তা ৪৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি। ২০০৮ সালে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল
মাত্র সাড়ে ৫ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮.১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।
২০২০-২১ অর্থবছরে ৮.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে বঙ্গোপসাগরের এক লাখ ১৮ হাজার বর্গকিলোমিটারের
বেশি জলসীমা বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল,
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজ শেষ
পর্যায়ে। ভেঙে পড়া রেল যোগাযোগ আবার গতি পেয়েছে। ২০ হাজার মেগাওয়াটের বেশি
বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে, যা ২০০৯ সালে ছিল মাত্র সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজও শেষ পর্যায়ে। বঙ্গবন্ধু
স্যাটেলাইট স্থাপনের ফলে যোগাযোগ প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে।
পায়রা, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে।
স্বল্পোন্নত
দেশ থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হতে চলেছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক থিংকট্যাংক
সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর) বলছে, ২০৩০ সালে
বাংলাদেশ হবে বিশ্বে ২৮তম বড় অর্থনীতির দেশ। বাংলাদেশে অগ্রগতির এই ধারা
অুণ্ন থাকুক।