পূর্ব ভূমধ্যসাগর নিয়ে দুই দেশের বিরোধ দীর্ঘদিনের। কিছুদিন হলো, পূর্ব ভূমধ্যসাগরে প্রাকৃতিক গ্যাস খোঁজা ও তোলা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে প্রবল উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। গ্রিসকে থামাতে তুরস্কও তেল অনুসন্ধানকারী জাহাজ পাঠায় পূর্ব ভূমধ্যসাগরে। তা নিয়ে জলঘোলা কম হয়নি। তুরস্কের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইইউ। এই অবস্থায় প্রায় পাঁচ বছর পর আবার বৈঠক শুরু হলো ইস্তানবুলে।
দীর্ঘদিনের বিরোধ একটা বৈঠকের ফলে মিটে যাবে এমন নাও হতে পারে। কিন্তু এই বৈঠকের মাধ্যমে আলোচনার প্রক্রিয়া আবার শুরু হলো। এর ফলে নতুন করে উত্তেজনা বাড়ার সম্ভাবনা কমবে। দুই দেশই আলোচনার টেবিলে বসে একটা ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। তারা এখন সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজবে।
অ্যামেরিকা এই বৈঠককে স্বাগত জানিয়েছে। আর জার্মানি বলেছে, তারা বেশ কিছুদিন হলো এই বৈঠকের অপেক্ষায় ছিল। এটা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক পদক্ষেপ।
বিরোধ কী নিয়ে
তুরস্ক ও গ্রিসের মধ্যে গত বছর উত্তেজনা অনেকটাই বেড়ে যায়। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান ঘোষণা করেন, তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য ইউরোপের দরজা খুলে দিয়েছেন। তুরস্কের সঙ্গে গ্রিসের ২০০ কিলোমিটারের সীমান্ত আছে। তারপর গ্রিসে উদ্বাস্তুদের ঢল নামে।
ভূমধ্যসাগরে প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন নিয়েও দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বিরোধ চরমে ওঠে। দুই দেশই দাবি করে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় গ্যাস তোলার ও খোঁজার অধিকার তাদের আছে। তাছাড়া জলসীমা নিয়েও বিরোধ শুরু হয়।
তুরস্কে এবং বিদেশে রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান সম্পর্কে নানা ধরনের মতামত রয়েছে৷ তাঁকে নব্য-অটোমান ‘সুলতান’ হিসেবে যেমন বিবেচনা করা হয়, তেমনি কারো কারো চোখে তিনি একজন স্বৈরাচারী নেতা৷ রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই ইসলামপন্থিদের বিভিন্ন দাবিদাওয়ার ব্যাপারে সচেতন ছিলেন তিনি৷ পাশাপাশি ন্যাটোতে তাঁর নেতৃত্বে বড় ধরনের অবদান রাখছে তুরস্ক৷ এর্দোয়ানের উত্থান নিয়ে এই ছবিঘর৷
বিবাদিত এলাকায় তুরস্ক গ্যাস অনুসন্ধানকারী জাহাজও পাঠিয়ে দেয়। গ্রিসের বন্ধু দেশগুলি এথেন্সের সমর্থনে এগিয়ে আসে। দুই দেশই সামরিক মহড়া শুরু করে দেয়।
নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত স্থগিত
তুরস্কের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারির হুমকি দিয়েছিল ইইউ। সোমবার ২৬টি দেশের বিদেশমন্ত্রী ভার্চুয়াল বৈঠকও করেন। পরে জার্মানির বিদেশমন্ত্রী হাইকো মাস বলেছেন, নিষেধাজ্ঞা জারির সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত রাখা হচ্ছে। হাইকো মাস গত সপ্তাহে তুরস্কে গিয়েছিলেন।
জর্মানির বিদেশমন্ত্রী জানিয়েছেন, ''আজ আমরা তুরস্কের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করিনি। কারণ, আমরা দেখছি কিছু ইতিবাচক ঘটনা ঘটেছে। ভূমধ্যসাগরের বিতর্কিত জায়গায় তুরস্কের কোনো জাহাজ নেই। তুরস্ক ও গ্রিস এখন সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজছে।'' মাসের মতে, ''এগুলি হলো ইতিবাচক দিক। আর এই আলোচনা শুরুর জন্য জার্মানি বেশ কিছুদিন ধরে অপেক্ষা করছিল।''
তুরস্কের ইকনমিক ডেভলাপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনসের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর সিগডেম নাস ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''এই আলোচনা শুধু যে দুই দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তাই নয়, ইইউ-র সঙ্গে তুরস্কের সুসম্পর্কের ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা নেবে।''