বাংলাদেশ
ও ভারতের মধ্যে সহযোগিতার ত্রে প্রতিনিয়ত সম্প্রসারিত হচ্ছে। আর এ েেত্র
একটি মাইলফলক অগ্রগতি হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১। খাগড়াছড়ির রামগড়ে
দুই দেশের সীমান্তে ফেনী নদীর ওপর নির্মিত হয়েছে এই সেতু। এটি বাংলাদেশে
ভারতের নির্মিত প্রথম মৈত্রী সেতু, যার মাধ্যমে প্রতিবেশী দুটি দেশের মধ্যে
সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। মঙ্গলবার দুই দেশের সরকারপ্রধান সেতুটি
উদ্বোধন করেন। সেতু উদ্বোধনের ণটিকে ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে উল্লেখ করে
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ভারতকে কানেক্টিভিটি
(সংযুক্তি) দেওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ দণি এশিয়ায় একটি নতুন যুগের সূচনা
করেছে।’ অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন,
‘কানেক্টিভিটি শুধু বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্ধুত্বই জোরদার করছে না,
ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্যও বড় সুযোগ সৃষ্টি করছে।’ ১৩৩ কোটি রুপি ব্যয়ে ১.৯
কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুটি নির্মাণ করেছে ভারতের ন্যাশনাল হাইওয়েজ অ্যান্ড
ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন লিমিটেড (এনএইচআইডিসিএল)।
চরম
প্রতিযোগিতাপূর্ণ বিশ্বে টিকে থাকার জন্য যোগাযোগ বা কানেক্টিভিটি বাড়ানোর
কোনো বিকল্প নেই। আর কানেক্টিভিটির মাধ্যমে লাভবান হওয়ার েেত্র বাংলাদেশের
সামনে অনেক সম্ভাবনাও রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথার্থই বলেছেন,
‘আমরা এমন এক অঞ্চলে আছি, যেখানে কানেক্টিভিটি চালুর বিষয়ে রণশীলতা ছিল এবং
যেখানে সম্ভাবনার চেয়ে আন্ত আঞ্চলিক বাণিজ্য অনেক কম।’ তিনি জানান, এই
সেতুর মাধ্যমে ত্রিপুরাবাসী শুধু চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর নয়, চট্টগ্রাম
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও ব্যবহার করতে পারবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী জানান,
ক্রমান্বয়ে পুরো ত্রিপুরা অঞ্চলকে বাংলাদেশ ও উত্তর-পূর্ব ভারতের মধ্যে
বাণিজ্য করিডর হিসেবে গড়ে তোলার কাজ চলছে। কানেক্টিভিটির মাধ্যমে বাংলাদেশ
কতটা উপকৃত হতে পারে, তা বোঝা যায় বিশ্বব্যাংকের ‘কানেকটিং টু থ্রাইভ :
চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড অপরচুনিটি অব ট্রান্সপোর্ট ইন্টিগ্রেশন ইন ইস্টার্ন
সাউথ এশিয়া’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে। মঙ্গলবার প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা
হয়, বাংলাদেশের ওপর দিয়ে শুধু ভারতের পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করলে বাংলাদেশের
জাতীয় আয় ১৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। অন্যদিকে ভারতের জাতীয় আয়
বাড়বে ৮ শতাংশ। বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল (বিবিআইএন) মোটর যানবাহনের তথ্য
বিশ্লেষণ করে এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর
(বাংলাদেশ-ভুটান) মার্সি টেম্বন বলেন, ‘ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ হলো ভারত,
নেপাল, ভুটান ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর গেটওয়ে। আঞ্চলিক বাণিজ্য, ট্রানজিট ও
লজিস্টিক নেটওয়ার্ক উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক পাওয়ার
হাউস হতে পারে।’ তাহলে আমরা এই সুযোগ কাজে লাগাব না কেন?
বাংলাদেশে
কিছু রাজনৈতিক দল আছে, যাদের রাজনীতি অন্ধ ভারত বিরোধিতার ওপর প্রতিষ্ঠিত।
তারা নানা রকম কথা বলছে ও বলবে। সেগুলোকে ধর্তব্যের মধ্যে না নিয়ে দেশের
স্বার্থে কানেক্টিভিটিকে এগিয়ে নেওয়া উচিত। বিবিআইএন ও বিমসটেকভুক্ত
দেশগুলোর মধ্যে কানেক্টিভিটি যত বাড়বে, অর্থনৈতিক সহযোগিতা তত বেশি জোরদার
হবে এবং এই অঞ্চলের দেশগুলো ততটাই দ্রুত এগিয়ে যাবে।