ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
বিরোধ মেটাতে মধ্যস্থতায় আমিরাত
Published : Monday, 22 March, 2021 at 7:49 PM
বিরোধ মেটাতে মধ্যস্থতায় আমিরাতভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যকার দীর্ঘদিনের বিরোধ মেটানোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। ২০০৩ সালে দু'দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু ওই চুক্তি লঙ্ঘন করে বছরের পর বছর ভারত এবং পাকিস্তান উভয়ই সীমান্তে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু গত মাসে দু'দেশই যখন ওই চুক্তি মেনে চলার বিরল প্রতিশ্রুতি দিল তখন পুরো বিশ্বই অনেকটা অবাক হয়েছে।

দু'দেশের মধ্যে এমন পরিস্থিতির মধ্যেই গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আরব আমিরাতের শীর্ষ কূটনীতিক নয়াদিল্লিতে একদিনের সফর করেছেন। আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদের এই সফরে তার সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রমানিয়াম জয়শঙ্করের বৈঠকের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানা সম্ভব হয়নি। আমিরাতের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দু'দেশ নিজেদের মধ্যে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।

আমিরাতের মধ্যস্থতার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে কয়েক মাস আগে শুরু হওয়া গোপন আলোচনায় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির বিষয়টি একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল। ওই বৈঠক সম্পর্কে জানেন এমন কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে এসব কথা জানিয়েছেন।

দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে স্থায়ী শান্তি স্থাপনের জন্য যুদ্ধবিরতিই সবচেয়ে বড় প্রচেষ্টা বলে উল্লেখ করেছেন এক কর্মকর্তা। পারমাণবিক অস্ত্র সমৃদ্ধ এই দুই দেশ কয়েক দশক ধরেই বিতর্কিত কিছু অঞ্চলকে নিয়ে প্রতিনিয়ত বিরোধে জড়িয়ে পড়ছে।

পরবর্তী ধাপ হিসেবে ওই কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন নয়াদিল্লি এবং ইসলামাবাদে পুনরায় নিজ নিজ দেশের রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দেয়া। ২০১৯ সালে সংবিধানের ৩৭০ নং অনুচ্ছেদ বাতিলের মাধ্যমে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জম্মু-কাশ্মীরের ওপর থেকে বিশেষ সুবিধা তুলে নেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক দেশ অন্য দেশ থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে নেয়।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ভারতের সঙ্গে পুনরায় আলোচনা বা বৈঠকের ক্ষেত্রে আমিরাতের কী ভূমিকা সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এমনকি ভারত এবং আরব আমিরাতের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

গত সপ্তাহে ইসলামাবাদে নিরাপত্তা সম্পর্কিত এক অনুষ্ঠানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া ‘অতীতের বিরোধকে কবর দিয়ে’ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্প্রীতির কথা বলেছেন। তিনি ‘শান্তিপূর্ণ উপায়ে’ কাশ্মীর সঙ্কট সমাধানের কথাও উল্লেখ করেছেন।

জেনারেল বাজওয়াই শুধু নয়, তার আগের দিন ওই একই অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও ভারতের সাথে তার দেশের সাথে শান্তি স্থাপনের প্রস্তাব দিয়ে বলেন, আঞ্চলিক শান্তি থাকলেই ভারত মধ্য এশিয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুযোগ পাবে। প্রধানমন্ত্রী এবং সেনাপ্রধানের কথার প্রতিধ্বনি করেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশীও।

অপরদিকে, করোনায় আক্রান্ত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের আরোগ্য কামনা করে টুইট করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দু’দেশের সাম্প্রতিক এসব ঘটনা এটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে তাদের মধ্যে হয়তো সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করেছে।

এদিকে, ভারত এবং পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই আমিরাতের বাণিজ্যিক এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক বিদ্যমান। গত কয়েক মাসে পাকিস্তান এবং ভারতের সম্পর্ক স্বাভাবিক করায় আমিরাতের প্রচেষ্টার বেশ কিছু ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। গত নভেম্বরে বিন জায়েদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন জয়শঙ্কর। এছাড়া গত মাসেই পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে ফোনে আলাপ করেছে আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সে সময় তারা আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছেন।

সে সময় পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের শ্রীলঙ্কা সফরের সময় তাকে বহনকারী বিমানকে নিজেদের আকাশপথ ব্যবহারের অনুমতি দেয় ভারত। এর আগে ভারতের আকাশপথ ব্যবহারের অনুমতি পায়নি পাকিস্তান।

দক্ষিণ এবং মধ্য এশিয়ার মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করে এই দুই অঞ্চলের সমৃদ্ধির সম্ভাবনা কাজ লাগাতে ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কে স্থিতিশীলতা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্ত এই দুই পারমানবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে বিরোধে সেই সম্ভাবনা জিম্মি হয়ে রয়েছে।

জেনারেল বাজওয়া স্বীকার করেছেন যে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে বৈরিতার মূলে রয়েছে কাশ্মীর নিয়ে বিরোধ। কিন্তু তারা বিশ্বাস করে যে অতীততে কবর দিয়ে দুই দেশের উচিত সামনে তাকানো।

সূত্র : ব্লুমবার্গ