ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
মিয়ানমারে বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেলেন অস্ট্রেলীয় দম্পতি
Published : Monday, 5 April, 2021 at 12:45 PM
মিয়ানমারে বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেলেন অস্ট্রেলীয় দম্পতিমিয়ানমারে গত মাসের শেষদিকে আটক হওয়া এক অস্ট্রেলীয় দম্পতিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। দুই সপ্তাহের মতো গৃহবন্দি থাকা ওই দম্পতির বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ গঠন করা হয়নি। মুক্তির পর তাদের বিনা অভিযোগে বার্মা ত্যাগের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সোমবার অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।

অস্ট্রেলীয় সরকারের এক বিবৃতিতে ওই দম্পতির মুক্তিলাভের বিষয়টিকে স্বাগত জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে বলা হয়েছে, বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেতে তাদের কনস্যুলার সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ম্যাথু ওকেন এবং ক্রিস্টা অ্যাভেরি নামের ওই দম্পতি রবিবার মিয়ানমারের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুন ত্যাগ করেছেন।

গত মার্চে একটি রিলিফ ফ্লাইটে বার্মা ত্যাগের চেষ্টার পর ওই দম্পতিকে গৃহবন্দি করে কর্তৃপক্ষ। মিয়ানমারে তাদের বেসপোক কনসালটেন্সি ব্যবসা রয়েছে।

ক্রিস্টা অ্যাভেরি বলেন, ‘আমি অবশ্যই মুক্তি পেয়েছি এবং আমার স্বামী ম্যাটকে নিয়ে বাড়ি যেতে পারছি বলে অবিশ্বাস্য রকমের স্বস্তি বোধ করছি। যদিও আমি জানতাম যে, আমি কোনও ভুল করিনি তারপরও দুই সপ্তাহের জন্য গৃহবন্দি হয়ে থাকা ছিল অত্যন্ত চাপের বিষয়।

রয়টার্স জানিয়েছে, শান টার্নেল নামের তৃতীয় আরও একজন অস্ট্রেলিয়ান বর্তমানে মিয়ানমারে বন্দিদশায় রয়েছে। অং সান সু চি-র উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করা ওই অর্থনীতিবিদকে অভ্যুত্থানের এক সপ্তাহের মাথায় আটক করা হয়।

অধিকার সংস্থা অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি) জানিয়েছে, মিয়ানমারে সামরিক শাসনবিরোধী প্রায় দুই মাসের বিক্ষোভে নিহতের সংখ্যা এরইমধ্যে সাড়ে ৫০০ ছাড়িয়েছে। গ্রেফতার বা আটক ব্যক্তির সংখ্যা আড়াই হাজারের বেশি।

আন্দোলনকারীরা প্রতিবাদের অংশ হিসেবে ইস্টার সানডেতে ‘ইস্টার এগ’ তৈরি করেছেন। এই ‘ইস্টার ডিম’ সেনাশাসনের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনের প্রতীক।

এদিকে, মিয়ানমারে স্বৈরশাসনের অবসান ও গণতন্ত্র-মানবাধিকারের দাবিতে দেশজুড়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। সেনা কর্তৃপক্ষের ব্যাপক দমন-পীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ সত্ত্বেও আন্দোলনকারীরা প্রতিদিনই মিয়ানমারের রাস্তায় নামছেন। তারা সেনাশাসন প্রত্যাখ্যান করছেন। দিনের বেলায় তো বটেই, আন্দোলনকারীরা রাতেও প্রতিবাদে শামিল হচ্ছে। তবে জান্তা সরকার তথ্যের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করতে নানান কৌশল অবলম্বন করেছে। তারা বিশেষ করে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ করছে। গত শুক্রবার ইন্টারনেট সেবাদাতাদের ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড সেবা বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

সামরিক শাসনের বিরোধিতা করায় প্রায় ৪০ জন সেলিব্রিটিকে গ্রেফতারের জন্য পরোয়ানা জারি করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। এই দলে সামাজিক মাধ্যম তারকা, সংগীতশিল্পী, মডেল রয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে মতবিরোধ প্ররোচিত করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এই অভিযোগে তাদের সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

উল্লেখ্য, মিয়ানমারে গত ১ ফেব্রুয়ারি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থান হয়। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। গ্রেফতার করা হয় অং সান সু চি-সহ তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) শীর্ষ নেতাদের। সেনাবাহিনী মিয়ানমারে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করে। সেনা অভ্যুত্থানের পর সেখানে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সেনা কর্তৃপক্ষ সহিংস ব্যবস্থা নিতে শুরু করে।

সেনাবাহিনীর রক্তক্ষয়ী দমন-পীড়নের মুখেও গণতন্ত্রপন্থীরা টানা বিক্ষোভ-প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে বিক্ষোভকারীরা দেশবাসীর প্রতি জান্তার বিরুদ্ধে ‘গেরিলা কায়দায় প্রতিরোধ’ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে। মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিন্দা-সমালোচনার ঝড় বইছে। মিয়ানমারের জান্তার ওপর নিষেধাজ্ঞাসহ নানাভাবে চাপ বাড়িয়ে চলছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।