অনুমতি মেলেনি বিদেশে যেতে পারবেন না খালেদা জিয়া
Published : Monday, 10 May, 2021 at 12:00 AM
দুর্নীতি
মামলায় দ-িত বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্যে বিদেশে নেওয়ার
অনুমতি চেয়ে যে আবেদন তার পরিবার করেছিল, তা নাকচ করে দিয়েছে সরকার।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় খালেদা জিয়ার
সাজা ও দ-াদেশ স্থগিত করে যে শর্তে তাকে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, তা
শিথিল করে এখন তাকে বিদেশে যেতে দেওয়ার ‘সুযোগ নেই’।
আইনমন্ত্রীর এ
মতামত পাওয়ার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন,
“খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চেয়ে তার ভাই শামীম এস্কান্দারের
আবেদনটি গ্রহণ করতে পারলাম না।”
শামীম এস্কান্দার ওই আবেদন করার পর গত
চার দিন ধরে পর্যালোচনা ও দাপ্তরিক বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে রোববার বিকালে
আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের সিদ্ধান্ত জানানো হল।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর এপ্রিলের ২৮ তারিখ থেকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
ইতোমধ্যে
তিনি করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত হয়েছেন বলে তার দলের প থেকে জানানো হয়েছে।
তাকে বিদেশে নেওয়ার জন্য পাসপোর্ট নবায়নসহ অন্যান্য প্রস্তুতিও এগিয়ে
নিচ্ছিল তার পরিবার।
দুই মন্ত্রী সরকারের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়ার পর বিএনপি বা খালেদার পরিবারের তরফ থেকে তাৎণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
দুর্নীতির
মামলায় দ- নিয়ে তিন বছর আগে কারাগারে যেতে হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা
জিয়াকে। গত বছর মহামারীর শুরুতে পরিবারের আবেদনে সরকার তার দ-ের
কার্যকারিতা স্থগিত করে সাময়িক মুক্তি দেয়।
সে সময় শর্ত দেওয়া হয়, মুক্ত থাকার সময়ে খালেদা জিয়াকে ঢাকায় নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না।
এরপর
থেকে গুলশানের ভাড়া বাসাতেই থাকছিলেন ৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়া।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর ২৭ এপ্রিল তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এরপর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি নতুন করে আলোচনায়
আসে।
তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ওই আবেদন নিয়ে ৫ মে রাতে
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। সেই রাতেই তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর
কথা জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছিলেন, খালেদা
জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার প্রয়োজন হলে বিষয়টি ‘ইতিবাচক দৃষ্টিতে’ বিবেচনা করা
হবে।
আইন মন্ত্রণালয়ে যাচাই বাছাই শেষে পরদিন বিকালে ওই আবেদনের ফাইল
আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের হাতে যায়। সে সময় তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার সাময়িক
মুক্তির শর্ত শিথিলের সুযোগ আছে কিনা, তা দেখে তিনি দ্রুতই সিদ্ধান্ত
দেবেন। তিনিও বিষয়টি ‘ইতিবাচকভাবে’ দেখার কথা বলেছিলেন।
এ নিয়ে দিনভর
আলোচনার মধ্যেই ৬ মে খালেদা জিয়ার পাসপোর্ট নবায়নের জন্য আবেদন করা হয়।
আবেদন যেহেতু হয়েছে, নবায়নও ‘হয়ে যাবে’ বলে সেদিন জানিয়েছিলেন
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
শুক্র ও শনিবারের সাপ্তাহিক
ছুটি পেরিয়ে খালেদার পরিবারের করা আবেদনের ফাইল আইনমন্ত্রীর ‘মতামতসহ’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৌঁছায় রোববার সকালে। দুপুরে জানিয়ে দেওয়া হয়,
খালেদা জিয়া অনুমতি পাচ্ছেন না।
কেন ‘না’:
খালেদা জিয়া কেন
অনুমতি পাচ্ছেন না, সেই ব্যাখ্যা দিয়ে আইনমন্ত্রী দুপুরে বিডিনিউজ
টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় ইতোমধ্যে (খালেদার
সাময়িক মুক্তির) সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই শর্তগুলো শিথিল করে খালেদা জিয়ার
বিদেশে যাওয়ার আবেদনে অনুমতি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।”
ওই মতামতই
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ
নিয়ে জানাবেন। একবার যখন একটা সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে, ৪০১ ধারার কার্যক্রম শেষ
হয়ে গেছে, সেজন্য এটাকে আরেকবার ওপেন করার সুযোগ নেই। সেেেত্র বিদেশে
যাওয়ার আবেদনে অনুমতি দেওয়ার সুযোগ নেই।”
আইনমন্ত্রী তার শেষ কথা জানিয়ে
দেওয়ার পরপরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকে সাংবাদিকদের সামনে আসেন
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
তিনি বলেন, “আইনমন্ত্রী
আনিসুল হক তার অভিমতসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফাইল পাঠিয়েছেন। আইনগত দিক
বিবেচনা করে খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার সুযোগ নেই।”
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘মানবিক দিক’ বিবেচনা করে তাদের নেত্রীকে অনুমতি দেওয়ার আহ্বান রেখেছিলেন সরকারের কাছে।
সে
বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এমন প্রশ্ন আসে কেন?
মানবিক দিক বিবেচনায় ছিল বলেই তো আবেদনটি গ্রহণ করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো
হয়েছিল। আইন মন্ত্রণালয় থেকে মতামত দিয়েছে, আইনের কারণে...।”
আইন
মন্ত্রণালয় অনুমতির বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সার সংপে পাঠানো হত প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে।
কিন্তু আইন মন্ত্রণালয় ‘না’ বলে দেওয়ায় এখন আর সেই প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হবে
না বলে এক প্রশ্নের উত্তরে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।