খুব
ধীরে হলেও কমছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। এ অবস্থায় সরকার কঠোর বিধি-নিষেধ
কিছুটা শিথিল করেছে। সরকারি-বেসরকারি অফিস, কলকারখানা খুলে গেছে। মার্কেট,
দোকানপাট, হোটেল-রেস্তোরাঁ খুলেছে। সব আসনে যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলছে।
মানুষের চলাচল অনেক বেড়েছে। কিন্তু মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব
মেনে চলার েেত্র রয়েছে চরম উদাসীনতা। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন,
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শিগগিরই আবার বেড়ে যেতে পারে। করোনা মোকাবেলায়
সরকারের গঠন করা জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি মনে করছে, কঠোর বিধি-নিষেধ
বা লকডাউন শিথিলের েেত্র কিছুটা তাড়াহুড়া করা হয়েছে। কমিটি মনে করছে,
লকডাউন আরো দুই সপ্তাহ চলমান রাখতে পারলে অনেক বেশি সুফল পাওয়া যেত। কমিটির
গত ১২ আগস্টের বৈঠক থেকে লকডাউন শিথিলের সরকারি সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার
সুপারিশ করা হয়েছে। কমিটির প থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে সভা-সমাবেশ, সামাজিক
অনুষ্ঠান, পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্র, কমিউনিটি সেন্টার ইত্যাদি আরো কিছুদিন
বন্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়ার ব্যবস্থা না
রেখে শুধু বিক্রির ব্যবস্থা রাখা, গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী নেওয়া, বাড়িতে
বসে কাজ করার ব্যবস্থা রেখে অফিসে কর্মীদের উপস্থিতি কমানোসহ আরো বেশ কিছু
পরামর্শ দিয়েছে কমিটি।
এটা ঠিক সরকারকে লকডাউন শিথিলের সিদ্ধান্ত নিতে
হয়েছে অনেকটা বাধ্য হয়েই। দেশের অর্থনীতি এরই মধ্যে বড় ধরনের য়তি মোকাবেলা
করেছে। তি ক্রমেই বড় হয়ে উঠছিল দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে। অনেক কলকারখানা
স্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। মানুষের জীবন-জীবিকা নানাভাবে হুমকির
সম্মুখীন হয়ে পড়েছিল। মানুষ ক্রমে লকডাউনের প্রতি অসহিষ্ণু হয়ে উঠছিল।
লকডাউন অমান্য করার প্রবণতাও বাড়ছিল। এ অবস্থায় সরকার লকডাউন শিথিল করলেও
স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে। কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানা
না হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। এমনও বলা হয়, সংক্রমণ
বেড়ে গেলে আবার লকডাউনে যেতে সরকার বাধ্য হবে। সরকারের এই ঘোষণা অনুযায়ী
এখন গণপরিবহনসহ সর্বত্র স্বাস্থ্যবিধি পালন নিশ্চিত করতে কঠোর পদপে নিতে
হবে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, অনেক মার্কেট ও শপিং মলে সঠিকভাবে
স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। এ জন্য নজরদারি বাড়াতে হবে। আরো বেশি সংখ্যায়
মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে।
লকডাউন শিথিল করার েেত্র দ্রুত
টিকাদানও একটি বিবেচ্য বিষয় ছিল। এরই মধ্যে দুই কোটি ডোজের বেশি টিকা দেওয়া
হয়ে গেছে। আশা করা হচ্ছে, চলতি মাসেই আরো অন্তত এক কোটি ডোজ টিকা দেওয়া
হবে। টিকার যাতে পুনরায় সংকট না হয় সেদিকে আরো বেশি জোর দিতে হবে। করোনা
চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা আরো বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে পরামর্শক কমিটির
সুপারিশগুলো বিবেচনায় নিতে হবে এবং সেগুলোর আলোকে পরবর্তী কার্যক্রম
নির্ধারণ করতে হবে। আমরা আশা করি, বাংলাদেশ খুব শিগগির করোনামুক্তির পথে
অনেক দূর এগিয়ে যাবে।